Human Rights

শিরোনামঃ লিঙ্গ বৈচিত্রময় জনগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক পলিসি ব্রিফ (খসড়া) চূড়ান্তকরন শীর্ষক মতাবিনিময় অনুষ্ঠিত।

২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির আয়োজনে, ইউনাইটেড ন্যাশনাল ডেমোক্রেসি ফান্ড এর সহযোগীতায় মেরী স্টোপস বাংলাদেশ মিলনাতয়নে “পলিসি ব্রিফ (খসড়া)” চূড়ান্তকরনে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনা সভায় “কাউকে বাদ দিয়ে নয়” এই স্লোগানে প্রান্তিক পর্যায়ে লিঙ্গ বৈচিত্রময় মানুষের জীবনযাপনের কথা তুলে ধরা হয়েছে। উল্লেখ্য যে বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থায় ট্রান্সজেন্ডার এবং হিজড়া জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা বিষয়ক সুনির্দ্দিষ্ট কোন বিধান নেই।

বন্ধুর পরিচালক (পলিসি অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস) উম্মে ফারহানা জেরিফ কান্তার সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) অধ্যাপক মশিউজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এএসএম আমানুল্লাহ, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার সৈয়দ তোফাজ্জেল হাসান হিরু এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এম রবিউল ইসলামসহ অন্যান্য অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। পলিসি ব্রিফ (খসড়া) উপস্থাপন করেন কনসালট্যান্ট ওয়ালিউল মুসতাসিম মাতিন।

উক্ত মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, সম্প্রতি একটি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশের ৭৩ শতাংশ মানুষ নিজেদের ‘হিজড়া’ ও বাকি ২৭ শতাংশ ‘ট্রান্সজেন্ডার’ হিসেবে পরিচয় দেয়। এ ছাড়াও ৭০ শতাংশ হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্য কর্মক্ষেত্রে এবং ৬৫ শতাংশ পরিবারে নির্যাতিত। এতে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়ে পড়ে এই জনগোষ্ঠী। কিছু ক্ষেত্রে পরিবারও তাদের স্বীকার করতে চায় না। এ ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে ভাতার ব্যবস্থা, পরিবারের সম্পত্তিতে অধিকার প্রতিষ্ঠা ও পাঠ্যসূচিতে হিজড়াদের নিয়ে নিবন্ধ  থাকলে তারা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সহায়ক হবে।

অনুষ্ঠানে মুক্ত আলোচনায় শোভা সরকার নামে এক ট্রান্সজেন্ডার বলেন, ‘পুরুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে যখন দেখি আমার নারীসুলভ আচরণ, আমি একজন নারী, তখন থেকেই আমাদের প্রতি বৈষম্য শুরু হয়। এ আচরণের জন্যই আমরা বাড়িঘর, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। প্রতিটি অফিসে অন্তত একজন করে ট্রান্সজেন্ডার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া উচিত।

ট্রান্সজেন্ডার অনন্যা বণিক বলেন, “বর্তমান সময়ে একটা সংখ্যাগরিষ্ঠ হিজড়া কমিউনিটি তৈরি হয়েছে, যারা ভিক্ষাবৃত্তি করতে চায় না। এসব মানুষ কাজ বা চাকরি করতে চায়। সমাজে বৈষম্য রোধ করতে চাইলে নারী-পুরুষের পাশাপাশি ট্রান্সজেন্ডার মানুষকে নিয়ে আসতে হবে।

সুপারিশ সমূহঃ

  • জাতীয় পাঠ্যপুস্তক কর্যক্রমে লিঙ্গ বৈচিত্রময় জনগোষ্ঠী সম্পর্কে সঠিক তথ্য অন্তর্ভূক্ত করা।
  • সরকারী সেবা প্রদানকারী সংস্থার কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক এবং আইন শৃঙ্খলায় নিয়োজিত সদস্যগণকে  জেন্ডার সংবেদনশীল করে তুলতে নিয়মিত মিটিং এবং কর্মশালা আয়োজন করা।
  • সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অনলাইনের মাধ্যমে সচেতনামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করা।
  • সিবিও, ওয়াচডগ, আইনপজীবী, প্যারালিগ্যাল এবং মানবাধিকারকর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করা।
  • হিজড়া এবং ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

সবশেষে ট্রান্সজেন্ডার ও হিজাড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন এবং আইনীসেবা প্রাপ্তির আশাবাদ ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানের সমাপনী ঘোষণা করা হয়।